বর্ষবরণের দিনও গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত ছিল। উত্তরের জাবালিয়া এবং মধ্যাঞ্চলের আল বুরেজ শরণার্থী শিবিরে হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে, বেত লাহিয়ায় ৬ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়। বিশ্বজুড়ে নতুন বছর বরণের উৎসব চললেও, গাজায় এবারের বর্ষবরণটি ছিল হতাশাজনক। সেখানে প্রাণে বাঁচতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তবু, তাদের আশা ২০২৫ সালে গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটবে।
ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর গাজার জনসংখ্যা প্রায় ৬ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো। নিহত হয়েছে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ এবং গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। জরুরি চিকিৎসার জন্য এরইমধ্যে ৫০ রোগীকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়েছে।
আইডিএফের হামলা থেকে বাঁচতে বেশিরভাগ ফিলিস্তিনির আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে, যেখানে তাঁবুতে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাদের। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আরেকটি নতুন বছর শুরু হলেও, সেখানে নেই কোনো আনন্দ। তবুও, ২০২৫ সালে যুদ্ধ শেষ হবে—এটাই এখন গাজার মানুষের একমাত্র আশা।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেরেম আবু সালেম ক্রসিংয়ের মাধ্যমে তাদের গাজার বাইরে পাঠানো হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজার হাসপাতাল ও এর আশপাশে ইসরায়েলি হামলার কারণে পুরো অঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
এদিকে, গ্রেপ্তার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়ারের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তার পরিবার।
গাজার এক যুবক বলেন, “যুদ্ধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছি। হয়তো নতুন বছরে যুদ্ধ শেষ হবে। ১৪ মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন নিজের বয়স ৩৬ নয়, ৬০ বছর বলে মনে হয়।” তিনি আরও বলেন, “হামলার মধ্যে প্রতিদিন দূর থেকে পানি টানতে টানতে আর সহ্য হচ্ছে না। সন্তানদের জন্য খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। হামলায় অনেকের স্বামী মারা গেছে। তারা কী করবে?”
শীত এবং বৃষ্টিতে প্রাণহানি বাড়ছে। ক্ষুধা যন্ত্রণায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে গাজাবাসীরা। তাদের পক্ষে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আরব ও ইসলামিক দেশসহ পুরো বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
গাজার আরেক যুবক বলেন, “১০ বার আমাকে জায়গা পরিবর্তন করতে হয়েছে। এখন এখানে কয়দিন থাকতে পারবো, জানি না। ঠান্ডা ও ক্ষুধায় আমাদের অবস্থা খারাপ। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। চিন্তাও করে না। আমরা চাই যুদ্ধ বন্ধ হোক। বিশ্ববাসীর কাছে শান্তি কামনা করছি।”
কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একাধিকবার যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেওয়া হলেও, গাজায় এখনো কোনো শান্তির আলো দেখা যায়নি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, হামলায় ১ লাখ ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।